×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২৮
  • ২৩ বার পঠিত
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের বাকলিয়া এক্সেস রোডে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদ নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহত সাজ্জাদ বহিষ্কৃত যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী ছিলেন।

এলাকাবাসী জানায়, সংঘর্ষের মূল দুই পক্ষ হলো—চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী বাদশা গ্রুপ এবং ব্যারিস্টার মীর হেলালের অনুসারী যুবদল নেতা হুমায়ুন রশিদ গ্রুপ।

সংঘর্ষের সূচনা
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক্সেস রোডের রসুলবাগ ও বগারবিল এলাকায় এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলেন, বাদশা গ্রুপের শতাধিক অনুসারী অস্ত্র হাতে এলাকায় অবস্থান নেয় এবং দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।

এক দোকান ব্যবসায়ী জানান,“হঠাৎ করে বাদশার লোকজন রাস্তায় নামে, সবাইকে দোকান বন্ধ করতে বলে। আমরা আতঙ্কে ভিতরে ঢুকে পড়ি।”

বৈঠকেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

সূত্র জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের একপর্যায়ে বাদশা বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়া গুলি চালায়। অভিযোগ রয়েছে, বাদশার সহযোগী ‘বোমা জাকির’ ও ‘ইয়াবা মুরাদ’ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ করিম বলেন, “বৈঠকের সময় বাদশার লোকজন নিজেরাই গুলি চালায়। অন্ধকারে নিজেদের দলের কয়েকজনই গুলিবিদ্ধ হয়। বাদশা বাহিনীর ছোড়া গুলিতেই সাজ্জাদ মারা যায়। পরে তারা উল্টো বোরহান-সোহেলদের ওপর দায় চাপায়।”

বাদশার দাবি ও বিতর্ক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের মধ্যে সাজ্জাদ মারা যান। নিহত সাজ্জাদ ছিলেন বাদশা গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
সংঘর্ষের পরপরই বাদশা দাবি করেন, “বোরহান, সোহেল, মিলটন, হিরন—এরা সবাই মাদকাসক্ত। তারাই এক্সেস রোডে গোলযোগ করেছে।”


তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, বাদশার সঙ্গে থাকা ওই বোরহান ও সোহেলও মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী। এতে স্পষ্ট হয়, একই রাজনৈতিক ছাতার নিচে থেকেও দুই গ্রুপ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত।

পুলিশের অবস্থান

সংঘর্ষের খবর পেয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “উভয় পক্ষের মধ্যে কারা সরাসরি সংঘর্ষে জড়িত, তা যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজনীতির আড়ালে দখল ও মাদকচক্র

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাকলিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের দুটি প্রভাবশালী গ্রুপ আধিপত্যের লড়াই চালিয়ে আসছে—একপক্ষ মেয়র শাহাদাত ঘনিষ্ঠ, অন্যপক্ষ ব্যারিস্টার মীর হেলালের অনুসারী। দখল ও মাদক ব্যবসা কেন্দ্র করেই এ বিরোধ বারবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।

রসুলবাগের এক প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে এখন রাজনীতি নেই—আছে শুধু দখল আর মাদক। আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি, কখন কোথায় আবার গুলি শুরু হয়।” 

বাকলিয়া এক্সেস রোডের এই সংঘর্ষ কেবল রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়—এটি নগর রাজনীতিতে অপরাধচক্র, মাদক ও দখলবাজির গভীর সংযোগের প্রতিচ্ছবি।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনকে এখন রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে তদন্ত করে প্রকৃত দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে; অন্যথায়, বাকলিয়া আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মঞ্চে পরিণত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat