জাহিদ হাসান টিপু, জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর :
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। গত এক মাসে (৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত) অন্তত ২৮টি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা হয়রানির আশঙ্কায় থানায় অভিযোগ না করলেও, চুরি ও নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন রোগী, স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩ লাখ ৩ হাজার জনসংখ্যার একমাত্র সরকারি ৫০ শয্যার হাসপাতালটি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগীতে ভরপুর থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৭০০–৮০০ জন এবং জরুরি বিভাগে ২০০–৩০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীদের দীর্ঘ সারি ও ভিড়ের সুযোগে সক্রিয় চোরচক্রটি নারীদের ব্যাগ, রোগীদের মালপত্র, টাকা, মোবাইল, গয়না—সবকিছু হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় এসব ঘটনার কোনো ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চোরচক্রের সদস্যদের শনাক্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না।
রোগী নারগিস বেগম বলেন,
“আমার ছেলের জন্য টিকিট নিচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি ব্যাগের চেইন কাটা। ব্যাগে থাকা ১২ হাজার টাকা আর মোবাইল ফোন নেই। কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বলে, সিসিটিভি নষ্ট। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?”
অন্য ভুক্তভোগী মাহমুদা খানম বলেন,
“ডাক্তারের চেম্বারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ দেখি ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা ও কানের দুল চুরি গেছে। চিকিৎসা নিতে এসে এমন ক্ষতি হলে আমরা কীভাবে বাড়ি ফিরব?”
রোগীর স্বজন লাভলু সরদার বলেন,
“এক মাস আগে আমার মায়ের গলা থেকে এক ভরি স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেছে। আজ আবার আমার স্ত্রীর মোবাইল ও টাকা চুরি হয়েছে। মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে চুরির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন,
“গত এক মাসে বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ পেয়েছি। সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় চোরচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্যামেরাগুলো দ্রুত ঠিক করার চেষ্টা চলছে। আমরা রোগী ও স্বজনদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।”
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন,
“হাসপাতালে চুরির খবর পেয়ে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সাদা পোশাকে পুলিশ নজরদারি করছে। শিগগিরই নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। তবে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় চোর শনাক্তে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।”
হাসপাতালের পরিবেশ এখন আতঙ্কে ভরা। ডাক্তার ও নার্সরা বাধ্য হয়ে নিজেদের মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র সবসময় হাতে নিয়ে ঘোরেন। চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ বলছেন, “এমন অরক্ষিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে যদি সর্বস্ব হারাতে হয়, তাহলে নিরাপত্তা চাইব কোথায়?”