×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২৬
  • ২৭ বার পঠিত
ফেনী ব্যুরোঃ

কাদা আর মাটির সংমিশ্রণে গড়া সেই ঘর, যেখানে আছে প্রকৃতির শীতল পরশ, সহজ-সরল জীবনের গল্প, আর এক টুকরো প্রশান্তি। একসময় গ্রামবাংলার মানুষের আশ্রয়, ভালোবাসা আর ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল এই মাটির ঘর। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেলেও, ফেনীর কোনো কোনো প্রান্তে এখনো টিকে আছে সেই অতীতের নিঃশব্দ সাক্ষী।

ফেনীর ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা এসব মাটির ঘর যেন পুরনো দিনের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দে। এর মধ্যে জেলার পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর গুথুমা গ্রামের তাকিয়া পাড়া এলাকায় রয়েছে এক অনন্য নিদর্শন দোতলা মাটির ঘর, যা আজও গ্রামীণ ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।

সবুজ প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মাটির দোতলা ঘর যেন চোখ জুড়ানো এক দৃশ্য। সিনেমার পর্দায় এমন ঘর দেখা গেলেও বাস্তবে এখন তা আকাশের চাঁদের মতো বিরল।

ঘরটির মালিক আবদুল মোমেন মঞ্জুর জানালেন, “এই ঘরটি প্রায় তিন দশকের পুরনো। যত্নে-ভালোবাসায় এখনো টিকিয়ে রেখেছি। গরমে ঠান্ডা, শীতে উষ্ণ, এমন আরাম আর কোথাও পাওয়া যায় না।”

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা বশর মিয়া বললেন, “আগে প্রায় সব ঘরই ছিল মাটির। এখন তো পাকা দালান ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না। এই ঘরটা দেখলেই মনে হয়, সময় যেন একটু থেমে গেছে পুরনো দিনে।”

বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সবুরা খাতুন স্মৃতিময় কণ্ঠে বলেন,“বিয়ের পর এই মাটির ঘরেই সংসার শুরু করেছিলাম। বিকেলে উঠানে সবাই মিলে গল্প করতাম, পিঠা বানাতাম। এখন সেই দিনগুলো শুধু স্মৃতি।”

ঘরটি ঘুরে দেখে স্থানীয় সংবাদকর্মী আজমীর মিশু বলেন, “এমন দোতলা মাটির ঘর এখন সত্যিই বিরল। এর নির্মাণশৈলী ও স্থায়িত্ব দেখে বোঝা যায় গ্রামীণ কারিগরদের দক্ষতা কত নিখুঁত ছিল। সংরক্ষণ করা গেলে এটি পর্যটনের আকর্ষণও হতে পারে।”

স্থানীয় তরুণ সাগর বলেন, “আমরা ছোটবেলায় এই ঘরের সামনে খেলতাম। এখন এই ঘরটা দেখলে মনে হয়, ইতিহাসের এক অংশ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এমন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা দরকার, এটা আমাদের গর্ব।”

দর্শনার্থী তানজিদ শুভ বলেন, “ভাবতাম, এমন মাটির ঘর শুধু সিনেমাতেই দেখা যায়। কিন্তু এখানে এসে সত্যিই অবাক হয়েছি। প্রকৃতির মাঝে এমন ঘর মানেই এক অনন্য শান্তির ছোঁয়া।”

সময়ের স্রোতে বদলে যাচ্ছে ফেনীর গ্রাম। প্রবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আধুনিকতার ছোঁয়া আর কংক্রিটের দালানে ঢাকা পড়ছে গ্রামের রূপ। তবুও এই মাটির ঘরগুলো টিকে আছে ঐতিহ্যের শেষ প্রতীক হয়ে, মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলার শিকড় এখনো মাটিতেই মিশে আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat