মোহাম্মদ শাহাজালাল,চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম নগরীতে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসন ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ও যানজটের চাপে নগরজীবন প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় আধুনিক গণপরিবহনই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। মনোরেল চালু হলে কর্মঘণ্টা বাঁচবে, যানজট কমবে এবং নগরের অর্থনীতি হবে আরও গতিশীল।”
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে চসিক রেস্ট হাউসে “চট্টগ্রামে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই” শীর্ষক সমন্বয় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, মনোরেল প্রকল্পের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফয়সাল রহমান, আরব কনট্রাক্টরস ও ওরাসকম কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাউসার আহমেদ চৌধুরী, প্রকল্প পরামর্শক কামরান আনোয়ার নাগিভ এবং প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও চসিক সমন্বয়ক আবু সাদাত মো. তৈয়ব।
সভায় জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে চারটি রুটে মনোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। সেগুলো হলো—
১️⃣ কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখানবাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা) — ২৬.৫ কিলোমিটার,
২️⃣ সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত (একে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গিবাজার) — ১৩.৫ কিলোমিটার,
৩️⃣ অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালী) — ১৪.৫ কিলোমিটার,
এবং
৪️⃣ সিটি গেট থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে আগ্রাবাদ এক্সেস হয়ে নিমতলা পর্যন্ত — ১০.৯ কিলোমিটার।
ওরাসকম কনস্ট্রাকশন কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটি পিপিপি (Public Private Partnership) পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে। আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ২০–২৫ বছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার পর মনোরেল সিস্টেমটি সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে।
প্রতিদিন মনোরেল পরিচালনায় প্রয়োজন হবে ৩০–৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং কেন্দ্রীয় স্টেশন, স্টোরেজ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ৫০ একর জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, যাত্রী প্রতি কমপক্ষে ৫ টাকা করে মুনাফা পাবে সিটি করপোরেশন।
সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন হতে সময় লাগবে প্রায় ৭–৮ মাস, এবং নির্মাণকাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও ৩–৪ বছর।
চসিক মেয়র বলেন, “চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এখানে যদি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তাহলে শুধু নাগরিকদের সময়ই নয়, উৎপাদনশীলতাও বাড়বে বহুগুণে। মনোরেল প্রকল্প সেই দিকেই এক বড় পদক্ষেপ।”
 
                       এ জাতীয় আরো খবর..