×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২৩
  • ২৭ বার পঠিত
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:

ইসলামী বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে “জুমা” বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ঈমানকে নবায়নের এক মহামুহূর্ত তৈরি করে।

জমাদিউল আউয়াল: স্মরণ ও প্রস্তুতির মাস

জমাদিউল আউয়াল মাস হিজরি বর্ষপঞ্জির মধ্যবর্তী এক শান্ত সময়। ইসলামি ইতিহাসে এই মাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে—বিশেষত নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের কিছু যুদ্ধ এবং ইসলামী সমাজের পুনর্গঠনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এটি এমন এক মাস, যা আমাদের আল্লাহর পথে অবিচল থাকার, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন—নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে দৃঢ় থাকে।"(সূরা আস-সাফ: ৪) এই মাসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মুমিন বান্দার উচিত আত্মপর্যালোচনা করা—গত মাসে কী করলাম, কীভাবে আরও ভালো হতে পারি। আর যখন এই মাসের প্রথম জুমা আসে, তখন তা যেন আত্মশুদ্ধির এক নতুন সুযোগ হয়ে আসে।

জুমা: সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন

নবী করিম (সা.) বলেন—“সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনেই আদম সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে।-(সহীহ মুসলিম: ৮৫৪)

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন। এ দিনে গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা, ও সালাত আদায় করা—এসব আমল অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন—হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে সালাতের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।-(সূরা আল-জুমা: ৯)

জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমার তাৎপর্য

যদিও “জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা” সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কোনো হাদীস নেই, তবে ইসলামী শিক্ষার আলোকে এ দিনটি নব সূচনা ও নেক আমলের প্রেরণা হিসেবে গ্রহণযোগ্য। কারণ, নতুন মাসের শুরু মানে এক নতুন সময়—একটি নতুন সুযোগ।

নবী (সা.) বলেছেন—যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার দৃঢ় সংকল্প করে, কিন্তু তা করতে না পারে, আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণ সওয়াব দেন।(সহীহ বুখারী: ৬৪৯১)
তাই জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমায় বান্দা যদি তওবা করে, নিজেকে সংশোধনের অঙ্গীকার করে, নতুন করে নেক আমল শুরু করে—তবে এটি এক মহামূল্যবান সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।

করণীয় আমলসমূহ

এই জুমা ও পুরো মাসে কিছু আমল করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যায়:

১. আত্মশুদ্ধি ও তওবা: অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২. সুরা আল-কাহফ তেলাওয়াত: নবী (সা.) বলেছেন,যে ব্যক্তি শুক্রবারে সুরা আল-কাহফ তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে এক শুক্রবার থেকে পরের শুক্রবার পর্যন্ত নূর দান করেন।”
(সহীহ হাদীস, আল-হাকিম: ৩৩৯২)

৩. দরুদ শরীফ বেশি পরিমাণে পড়া: নবী (সা.) বলেন, “তোমরা আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো—কারণ তোমাদের দরুদ আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।”(সুনান আবু দাউদ: ১৫৩১)

৪. দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা: মাসের শুরুতে দান-সাদকা করলে পুরো মাসে বরকত আসে।

৫. দুয়া কবুলের সময়: শুক্রবারে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বিশেষ দোয়া কবুলের সময়।

এই জুমা হোক জীবনের নতুন দিকনির্দেশনা

জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা কেবল একটি তারিখ নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু নেক আমল চিরস্থায়ী। নতুন মাসের শুরু যেন নতুন প্রেরণা হয়ে আসে।

আল্লাহ তাআলা বলেন— “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।”(সূরা আর-রাদ: ১১) তাই আসুন, এই পবিত্র জুমায় নিজেদের পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করি— নামাজে মনোযোগ দিই, কোরআন পাঠে নিয়মিত হই,
 মনের গ্লানি দূর করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবন উৎসর্গ করি।

পরিশেষে, জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা আমাদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ, নব উদ্যমে ইবাদত, ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মূল্যবান সুযোগ। এই দিনটি হোক তওবা, দোয়া ও নতুন জীবনের সূচনা করার দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র দিনে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat