ডেস্ক নিউজ :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের ‘একীভূত হওয়ার আলাপ’ চললেও আপাতত তা বন্ধ হয়ে গেছে। এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টিসহ বেশ কয়েকটি মধ্যমপন্থী গণতান্ত্রিক শক্তি ‘নির্বাচনী জোট’ গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছে। এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ যেন সেই পথেই হাঁটছে। অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে গিয়ে নতুন এই জোট গঠনকে ‘সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ’ হিসেবে দেখছে এনসিপি।
তবে, নির্বাচনী জোট শুধু আসন ভাগাভাগির জন্য নয়; আদর্শিক, সংস্কারপন্থী ও ন্যূনতম ঐক্যের সঙ্গে মিললেই চূড়ান্ত করবে বলে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এখনো এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান। যাচাই-বাছাই চলমান। রাজনীতিতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শেষ সম্ভাবনাটুকুও দেখতে হয়। বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা চলছে।’
“আমরা চাই, বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে দুই প্রধান ব্লক অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের বাইরে, তাদের জোটের বাইরে একটি তৃতীয় জোট বা ‘থার্ড ব্লক’ যদি করা যায়, এটা হবে সবচেয়ে ভালো। এটা আমাদের চেষ্টায় আছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে।”
সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জোটের বাইরে আমাদের যারা প্রার্থী আছেন, সম্ভাব্যরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা কিছুদিনের মধ্যে প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করব। আমরা সারাদেশে আমাদের সক্ষমতাটা তৈরি করতে চাচ্ছি। মানে, আমাদের প্রার্থী যেন অন্তত সব জায়গায় থাকে। তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা কিংবা জোট, সেটা তখন হবে।’
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে দলের নিবন্ধন, প্রতীক, নেতাদের বেফাঁস বক্তব্য, বিশাল গাড়িবহরসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে নতুন দলটি। এরই মাঝে যুক্ত ছিল গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনা। দলীয় নিবন্ধন চূড়ান্ত হলেও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নিতে রাজি হয়েছে এনসিপি। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রোববার (২ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন ঘোষণা দেন।
এনসিপির একাধিক নেতা জানান, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই তরুণ। কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে বিগত জুলাই আন্দোলনেও তারা একসঙ্গে রাজপথে ছিলেন। সেই হিসেবে দুই দলের অনেক কাজেরই মিল রয়েছে। তাই তাদের উচ্চপর্যায়ে একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বর্তমানে সেটি আপাতত হচ্ছে না। এখন গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি ছাড়াও ‘মধ্যমপন্থী গণতান্ত্রিক শক্তি’ নিয়ে জোট গঠনের ভাবনা চলছে। শুধু জোট নয়, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব রাজনীতি দাঁড় করানো, সংগঠন শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজটি বর্তমানে এনসিপি করছে।
দলীয় সূত্র মতে, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে নয়টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোট গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছে। এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণতন্ত্র মঞ্চের নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নিয়ে হতে যাচ্ছে এই জোট।
বিএনপির সঙ্গে আপনাদের আলোচনা হচ্ছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আলোচনা সবার সঙ্গেই হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে স্পেসিফিকভাবে আসন সমঝোতা বা জোট— এসব বিষয়ে কথা হয়নি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়, যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ অন্যান্য দলের সঙ্গেও আছে। আমরা শুধুমাত্র আসন পাওয়ার জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না। ন্যূনতমভাবে কিছু আদর্শিক বা নৈতিক কিছু পরিবর্তন বা সংস্কার বিষয়ক কিছু দাবি-দাওয়া মিলতে হবে। তারপর আমরা হয়তো জোট করব। মধ্যমপন্থী গণতান্ত্রিক শক্তি, তাদের নিয়েও আমরা জোট গঠনের চেষ্টা করছি।’