মোঃ শাহজালাল, চট্টগ্রাম:
স্ট্রোক এখন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রোগে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি প্রতিরোধযোগ্য। সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতাই পারে জীবন বাঁচাতে।”
রোববার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) প্রাঙ্গণে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্ট্রোক প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় এক বর্ণাঢ্য সাইকেল র্যালির মাধ্যমে। র্যালিটি চমেক ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে হাসপাতালের মূল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাইকেল ফেস্ট, ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন,
“হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক এক নয়। হার্ট অ্যাটাক হয় হৃদপিণ্ডে, আর স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে। হঠাৎ মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া বা কথা জড়ানো—এসবই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে এক মুহূর্ত দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত ব্যায়াম, লবণ ও তেল-চর্বিজাত খাবার কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার, এবং রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। প্রতিরোধই চিকিৎসার আগে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।”
মেয়র জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। নাগরিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত পরীক্ষা ও পরামর্শ গ্রহণে মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তাসলিম উদ্দিন, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানাউল্লাহ শামীম, ডা. মাহফুজুল কাদের, ডা. সিরাজুল মুনির অহি প্রমুখ।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন বলেন,
“বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার অর্ধেক সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও স্থূলতা এখনো প্রধান ঝুঁকি।”
তিনি আরও জানান, “চমেক হাসপাতালে এখন ২৪ ঘণ্টা স্ট্রোক জরুরি সেবা চালু রয়েছে, যাতে দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।”
নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. সাইফুল আলম বলেন,“স্ট্রোকের ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, ধূমপান পরিহার, লবণ ও তেল কম খাওয়া, এবং প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস জীবন বাঁচাতে পারে।”
আয়োজক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন,
“স্ট্রোক হঠাৎ ঘটে, কিন্তু এর ঝুঁকি প্রতিদিন তৈরি হয়। তাই প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে চমেক অডিটোরিয়ামে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামসুল আলম সবুজ।
এ জাতীয় আরো খবর..