ডেস্ক নিউজ :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এক বয়স্ক ‘মাদকসেবী’কে উচ্ছেদ করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডাকসু সদ্য সর্ব মিত্র চাকমা। বলা হচ্ছে, ‘এ ধরনের কাজ প্রশাসনের। ডাকসু নেতারা লাঠি হাতে এমনটি করতে পারেন না।’ তবে সেই সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো ট্রলে বানিয়েছেন সর্ব। শুধু তাই তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে একটি মিম ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সর্ব মিত্র ওই মিম ভিডিওটি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায়—একজন ঢাবি শিক্ষার্থী দৌঁড়ে এসে অভিযোগ করছেন যে এক বৃদ্ধ তাঁর মোবাইল ফোন নিয়ে পালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীটি ঘটনাটি সর্ব মিত্রের কাছে বিচার দিলে তিনি হেসে বলেন, ‘ শান্ত হও! মুরুব্বী মানুষ যা করছে, ঠিকই করছে। ওনার কাজে কোনো ভুল নেই। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে যা করেছেন, সেটাকে সম্মান জানানো উচিত। কোনো প্যারা নাই।’
এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমার ফোন নিয়ে গেছে, আর আমি তাকে সম্মান জানাব? প্রতি উত্তরে সর্ব মিত্র বলেন, হ্যাঁ, সম্মান জানাতে হবে। মুরুব্বী মানুষ যা করবে, সেটাই রাইট’ এরপর তিনিও বৃদ্ধকে ফোন নিয়ে চলে যেতে বলেন।’ ভিডিওটি ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে। মাত্র ১ ঘণ্টায় শেয়ার হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার, রিয়্যাকশন পড়েছে ৬০ হাজার।’
এর আগে উচ্ছেদ অভিযান ও বিতর্কিত ভিডিও নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন সর্ব মিত্র। ৬ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তিনি লিখেন,
১. বৃদ্ধ লোকের সাথে এমন আচরণ কেন?
বৃদ্ধ লোকটিকে এ পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় বার তুলে দেয়া হয়েছিল। ইনজেকশন সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ , গাঁজা ইত্যাদি মাদক সেবনের অভিযোগ থাকার পরও ক্যাম্পাস ছাড়ার সুযোগ দিয়েছি গত ছয় দিন। তাও, ক্যাম্পাস না ছাড়াই কঠোরতার আশ্রয় নিতে হয়েছে। উল্লেখ্য, মাদক সহ তার ভিডিও আছে প্রমাণ সহ। আমার তাকে প্রতিদিন সরাতে হচ্ছে , এজন্য আমার অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছিল ভিডিওতে আমার কথায় , লোকটা প্রতিদিন বলে "আজকেই যাচ্ছি।’
২. জায়গাটা কি ক্যাম্পাসের বাইরে?
যিনি পোস্ট করেছেন তিনি উল্লেখ করেছেন বার্ন ইন্সটিটিউটের কথা, বোধ হয় ইচ্ছাকৃতভাবেই যাতে মানুষ মনে করে ক্যাম্পাসের বাইরে । কিন্তু ফুটপাতটা মূলত অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত ফুটপাত এবং ক্যাম্পাসের অংশেই পড়ে। এ ফুটপাতে ভবঘুরে ও মাদকসেবী দিয়ে ভরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
৩. বৃদ্ধ লোকটিকে কি প্রহার করা হয়েছে?
বৃদ্ধ লোকটির ব্যাগে মূলত মাদক এবং বিভিন্ন উপাদান ছিল এবং স্ট্র্যাচার তার হাতে ছিল যেটা তার লাগেই না। কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রতারণার উদ্দেশ্যে লোকটা স্ট্র্যাচার ব্যবহার করে। এর আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল, যাতে স্ট্র্যাচার ব্যবহার না করে। লোকটিকে কোনোভাবেই প্রহার করা হয়নি। প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্য মূলত ব্যাগটা তার হাত থেকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যাগে বারি দেয় লাঠি দিয়ে। এবং ক্যাম্পাসের আইন শৃঙখলা রক্ষার্থে এটা প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্বের আওতায় পড়ে। কারণ, প্রক্টরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।
৪. সর্ব মিত্রের কতটুকু এখতিয়ার আছে?
ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ অধ্যাদেশ দ্বারা স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি আনুষ্ঠানিক অংশ। ডাকসু বডির একজন সদস্য হিসেবে আমার অবশ্যই এখতিয়ার আছে প্রক্টরিয়াল বডি কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এবং তাদের অপারেশন পরিচালনায় সহায়তা করা।
৫. পুলিশের হাতে কেন দিইনি?
তথাকথিত ‘প্রহারের’কারণে যে মানবিকতার কথা বলছেন , সেই একই মানবিকতার কারণে গত ছয়দিন ধরে লোকটাকে উঠাচ্ছি আইনের হাতে তুলে না দিয়ে। বৃদ্ধ লোকটির অসহায়ত্ব আমার কাছে গত ছ'দিন মূল বিষয় ছিল , যা দূর্ভাগ্যবশত আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৬. ভিডিও কারা ধারণ করেছিল?
মূলত কোনো পথচারী এ ভিডিও করেনি। যারা সেদিন এ ভিডিও করেছে তারা খুব সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে করেছে এবং তারা পুরো অভিযান জুড়ে বাইকে দূর থেকে ভিডিও ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে এবং তারা প্রত্যেকে রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।