ভোলা প্রতিনিধি ;
ভোলায় সন্তানের অত্যাচার ও নির্যাতনের কারনে সংবাদ সম্মেলন করেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা।সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে করেন মৃত বীর মুক্তিযুদ্ধা ওবায়েদুল হক এর স্ত্রী নুর নাহার বেগম।
নুর নাহার বেগম সংবাদ সম্মেলন বলেন, আমার বড় ছেলে মিজান এবং তার স্ত্রী রেহানা বেগম, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমাকে দিনের পর দিন মারধর করে।খাওয়া, পড়া,চিকিৎসা কিছুই দেয় নাই এবং আমাকে দরজা বন্ধ করে মারধর করেছে এবং পরবর্তীতে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে এবং বলেছে আমি যদি ইহা প্রকাশ করি, তবে আমার ছোট ছেলে রিয়াজ কে মেরে ফেলবে।যার কারণে আমি কোর্টে একটি মামলা দায়েল করি।জজ সাহেব মিজানকে শর্ত স্বাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দেয়।জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে পুনরায় আমাকে জুতা দিয়ে মারে এবং আমার ছোট ছেলেকে খুন করতে চায়। সেই জন্য আমি দৌলতখান থানায় একটি অভিযোগ পত্র দায়েল করিয়া আইনের সাহায্য চাই। দৌলতখান থানা কর্তৃপক্ষ ১১ অক্টোবর ২০২৫ ইং তারিখে দু পক্ষকে অবহিত করিয়া দৌলতখান থানায় একটি সালিশের তারিখ নির্ধারণ করেন। আমি আমার মেয়েদের ও ছোট ছেলের বউ,নাতনি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ সকল মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের নিয়ে উপস্থিত হই।দীর্ঘ সময় ধরে দৌলতখান থানায় বসে থাকার পর এসআই সাহেব জানান মিজান থানায় আসবে না। ইতিপূর্বে গত ২ দিন আগে মিজান ও রেহানা তার ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী কামাল, সাদ্দাম সহ অজ্ঞাত অনেকে আমার ছোট ছেলে রিয়াজকে খুন করতে চায় এবং যেকোন ভাবে রিয়াজের নামে নারী নির্যাতন এর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি রিয়াজকে দিয়ে জীবন বাচানোর দায়ে আমার বড় ছেলে মিজান ও তার স্ত্রী রেহানা এবং মিজানের ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী কামাল, সাদ্দাম সহ অজ্ঞাত আরো অনেকের নামে দৌলতখান থানায় গত ১১ অক্টোবর ২০২৫ ইং তারিখে আরো একটি সাধারন ডায়েরি করি।
আজ আমি সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হই। যেই ছেলেকে কষ্ট করে জন্ম দিয়ে বুকের দুধ খাইয়ে কোলে পিঠে করে বড় করেছি। আজ সেই ছেলে হাতের জুতার বাড়ি খেতে হয়,জাতির কাছে আমার প্রশ্ন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে এটাই কি আমার প্রাপ্য? মায়েরা কি এজন্যই সন্তান জন্ম দেয়? মা নামের শব্দটি কি এতই অমর্যাদার? নাকি মায়েরা এভাবেই ছেলেদের হাতে খুন হবে.? আমার স্বামী রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেন। আর সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর প্রতি কেন এত অত্যাচার.? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম। কালে-কালে যুগে- যুগে পত্র পত্রিকায় এসব শুনেছি, আমার জীবনেও যে, এই ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে,জীবনে কল্পনা করিনি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দগণ আমার বয়স ৮০ বছর, ঠিকমত কথা বলতে পারি না, আমার ডান পায়ের হাঁটুর রগ ছিড়ে গেছে,একটি কিডনি ডেমেজ হয়ে গেছে। ডায়াবেটিক সহ বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত আমি। তাই লিখিত ভাবে আপনাদের জানালাম। যাতে করে মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সমস্ত প্রশাসন এবং সমস্ত ভাইয়েরা ও সর্বোচ্চ ও সর্ব সাধারণ মানুষ জানতে পারে যে, একজন মা তার নিজের পেটের সন্তান দ্বারা কিভাবে অত্যাচারিত হয়।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিনী কিভাবে বিচার পাওয়ার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দগণ, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আপনাদের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে এই ঘটনাটি দেশবাসীকে জানাবেন।আপনাদের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে আমার প্রতি ন্যায় বিচারের দাবি রাখবেন।
আর কোন মা যে, আমার মত কষ্ট না পায়।মিজান ও তার স্ত্রী রেহানা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, এত বড় অপরাধী যেন আইনের ফাঁক ফোকর সৃষ্টি করে বের হতে না পারে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম মা-বাবাকে সম্মান করা ভুলে যাবে আর মা শব্দটির অর্থ ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আমার প্রাপ্য, আমার প্রাপ্য ভাতা কৌশলে নিয়ে গেছে আমার বড় ছেলে মিজান, আমাকে দিচ্ছেনা আমি এটারও বিচার দাবি করছি।
এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা, মিজান ও রেহানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..