×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১২-১৫
  • ১০৪ বার পঠিত
পরিতোষ বড়ুয়া রানা, চট্টগ্রাম 
বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা এক সংকটকালীন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের দ্রুত বর্ধনশীল প্রভাব, প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি এবং তথ্যপ্রবাহের সহজলভ্যতা সাংবাদিকতা পেশায় বিপ্লব এনেছে। তবে এর উল্টোদিকে প্রকৃত সাংবাদিকতার মান হ্রাস পাচ্ছে। পেশাটিতে যোগ দিচ্ছেন অনেক নতুন মুখ, কিন্তু এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অদক্ষ, অনৈতিক এবং পেশাদারিত্বহীন সাংবাদিকতার উপস্থিতি।  


সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য হলো সত্য উদঘাটন এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া। এটি এমন একটি পেশা যেখানে নৈতিকতা, দক্ষতা এবং জনস্বার্থের প্রতি অঙ্গীকার থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই সাংবাদিক পরিচয় ধারণ করছেন শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ, সামাজিক প্রভাব বা আর্থিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে।  

গণমাধ্যমের যে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা, তার পরিবর্তে এখন অনেক ক্ষেত্রে তা বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ফলে সাংবাদিকতার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমেই কমছে। 

বর্তমানে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থান সাংবাদিকতার প্রবেশদ্বারকে সহজ করে তুলেছে। এখন যেকোনো ব্যক্তি একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিতে পারেন। এ কারণে পেশাদার সাংবাদিকতা এবং অপেশাদার কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।  

 অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটের মুখে পেশাদার সাংবাদিকদের যথাযথ পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ সাংবাদিকরা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের জায়গায় প্রবেশ করছেন অদক্ষ এবং অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা, যারা সাংবাদিকতার নৈতিক দিকগুলো সম্পর্কে অবগত নন। কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে অনেকেই প্রভাবশালী মহলের তোষামোদ, ব্ল্যাকমেইলিং, এমনকি বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন।  


সাংবাদিকতা একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সুযোগ এখনও সীমিত। অনেক ক্ষেত্রেই পেশাদার প্রশিক্ষণ ছাড়াই সাংবাদিকরা মাঠে নামছেন, ফলে রিপোর্টিংয়ে ভুল এবং অপসাংবাদিকতা বাড়ছে।  


জনসাধারণের মধ্যে গণমাধ্যম সম্পর্কে অবিশ্বাস বাড়ছে। ভুল তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন, এবং গুজব ছড়ানোর কারণে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।  

অপেশাদার সাংবাদিকতার কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে, নীতিনিষ্ঠ সাংবাদিকরা নানা রকম চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতার কারণে ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।  

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও কঠোর করতে হবে। ভুয়া সাংবাদিক বা অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো এবং নতুন সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। অদক্ষ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। পক্ষপাতহীন এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।  

সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। তবে অপসাংবাদিকতার এই ঢেউ পেশাটির প্রতি মানুষের আস্থা এবং মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, আর এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন এবং পেশাদারিত্বের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা ছাড়া একটি সুশৃঙ্খল ও উন্নত সমাজ গঠন সম্ভব নয়। 

লেখক: বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পরিতোষ বড়ুয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat