ডেস্ক নিউজ :
দেশ বিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীকে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে কতৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে কুশল বরণ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) একজন ঘনিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে ইসকনের চাপে কুশল বরণকে পদোন্নতি দিচ্ছে চবি প্রশাসন!
এর আগে, বিভাগীয় পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর ইসকনের চাপে এক প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে কতৃপক্ষ। তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও প্রো ভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে এই শিক্ষক প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে নিয়োগ বোর্ডে বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখেন নি। বিতর্কিত এই শিক্ষক প্রার্থী ছিলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অমর বণিক অর্ণব। পরে তোপের মুখে পড়ে বিতর্কিত এই শিক্ষক প্রার্থীর নিয়োগ স্থগিত করে ভিসি অধ্যাপক শিরীণ আখতারের প্রশাসন।
সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিমের প্রশাসনের অধীনে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান কুশল বরণ। তার নিয়োগের পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল। এবার ইসকন ঘনিষ্ট শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীকে পদোন্নতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর একপ্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই বিতর্কিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এসবের তোয়াক্কা না করে আজ মঙ্গলবার পদোন্নতি বোর্ড বসাচ্ছে প্রশাসন। ইসকানের চাপের কারণে তার নিয়োগ বোর্ড দিতে পারে চবি কতৃপক্ষ এমনটাই ধারণা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী একজন ইসকন সদস্য। তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কুশল বরণ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর একজন পেইড এজেন্ট। তারা বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত।
চলতি বছরের ৪ জুলাই কুশল বরণের পদোন্নতিতে প্রথম বোর্ড বসানো হয়। এদিন সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকারে তাকে ডাকা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও দেশ বিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পদোন্নতি বোর্ড বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবির প্রেক্ষিতে সেদিন পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত করে প্রশাসন।
তবে আবারও কুশল বরণের পদোন্নতিতে বোর্ড বসাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুটো পদোন্নতি বোর্ডের যেকোনো একটিতে তাকে ডাকা হবে। এ ছাড়া সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক হিমেল কর্মকার ও পবিত্র কুমার হিরাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বোর্ড ডাকা হচ্ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের চাকরি অস্থায়ী থেকে স্থায়ী করা হয়। এ দুজনই ইসকনের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এদের একজনের পদন্নোতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত সমূহ পূরণ হয়নি বলেও জানা গেছে।
২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন-এর আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন কুশল বরণ চক্রবর্তী। ‘ভারতের প্রেসক্রিপশনে’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তার গ্রেপ্তারও দাবি করেছিলেন তারা। কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সমর্থক এবং র-এর এজেন্ট বলে অভিযোগ করা হয়।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের কর্মী এনামুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের হামলার শিকার হন। এ সময়ে তিনি কিরিচের কোপে মাথায় গুরুতর জখম হন এবং তার ডান হাত ভেঙে যায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে এনামুল হক চৌধুরী গত বছর ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের নামে মামলার আবেদন করেন। এই মামলার ২০তম আসামি কুশল বরণ চক্রবর্তী।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের খুবই ঘনিষ্ঠের একজন। গত বছর ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করলে তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তার ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তিলি, সংগঠন মন্ত্রী শ্রী আসিস চৌহান, ত্রিপুরা প্রদেশের উপাধ্যক্ষ শ্রী রাম প্রসাদ পাল এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমারের সাথেও ছবি রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। এটা জেনে বলতে হবে।
জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে ফোন দিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।
এ জাতীয় আরো খবর..